বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা ডেইড়ি খামারে ক্যালসিয়াম ঘাটতি উক্ত খামারের সফলতার জন্য প্রধান বাধাগুলোর একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দামি খাবার কিংবা ব্যয়বহুল আবাসন ব্যবস্থা কোন কাজে আসবে না যদি গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ না করা হয়।
যদিও ক্যালসিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস হল সবুজ ঘাস। কিন্তু আমাদের দেশে চারণভূমি কম থাকায় এবং শহরাঞ্চলে না থাকায় সবুজ ঘাসের জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া দুধের সাথে যেহেতু ক্যালসিয়ামের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে তাই অধিক দুগ্ধপ্রদান ক্ষমতা সম্পন্ন বিদেশি উন্নত প্রজাতির গাভীর জন্য অবশ্যই সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ক্যালসিয়াম প্রদান করা জরুরি. ক্যালসিয়ামের অভাবে গাভীর মিল্ক ফিভার নামক রোগ হতে পারে যার সুচিকিৎসা না হলে খামারের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
মিল্ক ফিভার কিঃ
খামারিরা অনেক সময় অভিযোগ করে থাকেন যে উন্নত প্রজাতির গাভিসমূহ বাচ্চা প্রসব করার আগে কিংবা পরে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারে না, হাত পা ছেড়ে দিয়ে মরার মত পড়ে থাকে। মূলত এটি একটি মেটাবোলিক রোগ যা কিনা ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। এই রোগটিকেই মূলত মিল্ক ফিভার বলা হয়ে থাকে। মূলত রক্তে ক্যালসিয়ামের স্বাভাবিক পরিমাণ থেকে যখন কমে যায় তখনই মিল্ক ফিভার হয়ে থাকে। রক্তে ক্যালসিয়ামের আদর্শ মাত্রা প্রতি ১০০ সি.সি. তে ৯মিলিগ্রামের চাইতে বেশি থাকে। কিন্তু কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এই মাত্রা ৩ কিংবা ৪ মিলিগ্রামের কাছাকাছি নেমে আসে আর তখনই মিল্ক ফিভার হয়ে থাকে।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবজনীত রোগঃ
- ১) গাভীর শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে মিল্ক ফিভার বা হাইপোক্যালসেমিয়া রোগ দেখা দেয়।
- ২) পূর্ণ বয়স্ক প্রাণীতে এর অভাবে অস্টিওম্যালাসিয়া (Osteomalacia) বা অস্থি কোমলতা রোগ দেখা য়ায়।
- ৩) ফসফরাসের অভাবে গবাদিপশুর পিকা (Pica) রোগ বা ক্ষুধা মন্দা রোগ দেখা যায।
- ৪) ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের অভাবে গবাদিপশুর হাড়ের ভঙ্গুরতা দেখা যায় এবং পশু হাঁটতে ও পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
- ৫) গবাদি পশুর দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়।
- ৬) প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এমন কি প্রজনন ক্ষমতা একেবারে নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
গবাদিপশুর শরীরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তাঃ
Bonacal-P Oral suspension- 5 Liter
গবাদিপশুর শরীরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি এর একটি নির্দিষ্ট ব্যালেন্স থাকা প্রয়োজন হয়। এর ব্যতিক্রম হলে খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকা সত্ত্বেও গবাদিপশুর শরীর তা গ্রহণ করতে পারে না। দেখা যায় পশুর শরীরে ৩:১ মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকা দরকার। আর এজন্য শুধু ক্যালসিয়াম সরবরাহ না করে সাথে ফসফরাস ও ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে সরবরাহ করতে হয়।
গাভীর দুধে প্রচুর পরিমাণে এই দুইটি মিনারেল থাকে যা গাভীর শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে গাভীর শরীরে এই দুটি মিনারেল সহ নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব দেখা যায়
গাভীর দুধের উৎপাদন হার কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হল কাচা ঘাস কম সরবরাহ করা কারণ গাভি মূলত কাচা ঘাস এবং সুষম দানাদার খাবার থেকে ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য মিনারেলস গ্রহণ করে থাকে।
গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ ও তার ধরনসমূহঃ
গরুর সকল বয়সেই এই খনিজ উপাদান শরীরে প্রয়োজন হয়। গরুকে তার খাদ্যের মাধ্যমেই সচরাচর ক্যালসিয়াম সরবরাহ করা হয়।
যেকোনো বয়সের গরুর জন্যই ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস জরুরি। যদি পর্যাপ্ত ঘাস না পায় কিংবা খাবার থেকে যতটুকু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস গ্রহণ করছে তার তুলনায় বেশি পরিমান দুগ্ধবতী গাভীর শরীর থেকে বের হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট হিসাবে গরু, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদিপশুকে মাঝে মাঝে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস প্রয়োগ করতে হবে যা বিভিন্ন কম্পোজিশনে এবং বিভিন্ন ফর্মে বাজারে পাওয়া যায়।
ফিড গ্রেড ক্যালসিয়াম:
গবাদিপশুর খাদ্যের ক্যালসিয়মের চাহিদা পূরণে ফিড গ্রেড ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। ফিড গ্রেড এই সকল সাপ্লিমেন্টের মধ্যে লাইমস্টোন বা চুনাপাথর, ঝিনুকের গুড়া, ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট (DCP), মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট (MCP) ইত্যাদি ব্যবহার হয়। লাইমস্টোন বা চুনাপাথরে ৩৮% ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কিন্তু এতে ফসফরাস পাওয়া যায় না। অপরদিকে ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেটে ২২% ক্যালসিয়াম ও ১৮% ফসফরাস পাওয়া যায় ।
Catoforce Inj100ml ষাঁড় মোটাতাজাকরনের জন্য কার্যকরী মেটাবোলিক ইনহ্যান্সার
ওরাল সাসপেনশন বা সিরাপঃ
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি৩ এর অভাব জনিত কারণে সবচেয়ে বেশি যে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার হয় সেটি এই ওরাল সাসপেনশন। এই সিরাপ টি গবাদিপশুর শরীরে দ্রুত ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য দরকারি ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে।
মিল্ক ফিভার সহ অন্যান্য মিনারেলস এর অভাব জনিত রোগে এই সলিউশন বা ওরাল সাসপেনশন টি ব্যাপক ব্যবহার হয়। বাজারে প্রায় সকল ভেটেরিনারি ঔষধের দোকানে এই প্রোডাক্ট টি রয়েছে। অবশ্যই ভেজাল পণ্য থেকে সাবধান হতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে ব্র্যান্ড কম্পানির প্রোডাক্ট কেনার জন্য ।
ইনজেকশনঃ
গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশন গরুর শরীরে বা রক্তে দ্রুত ক্যালসিয়াম সরবরাহের জন্য ব্যবহার হয়। গরুর মিল্ক ফিভার বা অন্যান্য রোগে গরুর শরীরে দ্রুত ক্যালসিয়াম সরবরাহের প্রয়োজন হয় তখন গরুর ক্যালসিয়াম ইনজেকশন শিরায় বা রগে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বাজারে এই ইনজেকশন প্রায় সকল ছোট বড় ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। পাওডার ফর্মেও এই গরুর ক্যালসিয়াম ঔষধ টি পাওয়া যায়। এই পাওডার ওয়াটার সলিবল বা পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় পানির সাথে মিশিয়ে গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারে ব্যবহার করা হয়।
গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট:
ছাগল গরুর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট মার্কেটে পাওয়া গেলেও এর ব্যবহার খুব কম দেখা যায়। কেননা খামারি গবাদিপশুকে বোলাস বা ট্যাবলেট আকারে খাওয়ানোর চেয়ে ওরাল সলিউশন আকারে পানি বা খাদ্যের সাথে ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে।
Calcimax 100ml গরুর জন্য বেস্ট কোয়ালিটি ক্যালসিয়াম ইনজেকশন
Orthodox Tea শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত অর্থোডক্স চা
বর্তমানে ডেইরি ফার্মের পাশাপাশি লেয়ার মুরগির খামারে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সাপ্লিমেন্ট বেশি ব্যবহার হতে দেখা যায়। কেননা লেয়ার মুরগির ডিমের গঠন ও ডিমের প্রোডাকশন ঠিক রাখতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাছাড়া মৎস্য শিল্পে খাদ্যের সাথেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।