সবার আগে জানতে হবে ষাঁড় মোটাতাজাকরণ বলতে আমরা কি বুঝি। মূলত ভাল কোয়ালিটির মাংস পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে রেখে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বাস্থবান গরু পালন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আর্থিক সমৃদ্ধি লাভের প্রকৃয়াকে মোটাতাজাকরণ বলা হয়ে থাকে। আজকে আমরা ষাঁড় মোটাতাজাকরণের সম্পূর্ন পদ্ধতি তিনটা ধাপে আলোচনা করব।
০১. পশু নির্বাচন এবং স্টকিং :
মোটাতাজাকরণের জন্য সাধারনত দুই থেকে চার বছর বয়সী ষাঁড় কেনা যেতে পারে এবং অবশ্যই নিম্নলিখিত শারীরিক বিষয়গুলা খেয়াল করেই ষাঁড় কেনা জরুরি:
- শরীরের চামড়া যেন ঢিলা হয়, প্রয়োজনে দুই আঙুল দিয়ে টান দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে।
- গরু অপুষ্ট কিংবা দুর্বল হলে সমস্যা নাই তবে যেন রোগাক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- বর্গাকার দেহ, চওড়া মাথা এবং প্রশস্ত ঘাড় হতে হবে। পিছনের অংশ এবং পিঠের অংশ যেন চওড়া হয়।
- শরীরের পশম খাটো এবং শরীরের সাথে মিলানো থাকতে হবে।
- শরীরের হাড়গুলা প্রশস্ত ও মোটা হতে হবে।
০২. সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
মোটাতাজাকরণের জন্য গরুকে শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে এবং প্রচুর পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে। গরুর মোট খাদ্য চাহিদার ৪০ শতাংশ দানাদার খাদ্য এবং বাকী ৬০ শতাংশ রাফেজ বা আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মোট রাফেজের ৪০% ড্রাই রাফেজ বা খড় আর বাকী ৬০ % গ্রীন রাফেজ বা কাঁচা ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইউ.এম.এস বা ইউরিয়া-মোলাসেস-স্ট্র পদ্ধতিতে খাবার প্রয়োগ করলে খড়ের পুষ্টিগুণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায় যা কম সময়ে ও কম খরচে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়াও সাইলেজ তৈরি করে খাওয়ালে উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ে ও অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। সারাবছর কাচা ঘাসের চাহিদা পুরন করা যায়। সুষম দানাদার খাদ্য হিসাবে গমের ভুসি, চালের কুড়া, তিলের খৈল, চিটাগুড়, অনুমোদিত প্রোটিন মিল এবং লবণ পরিমিত মাত্রায় মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
গরু মোটাতাজাকরণের জন্য গরুর দৈনিক খাদ্য তালিকাঃ
গরুর শারীরিক ওজন (কেজি) | ইউরিয়া-মোলাসেস দিয়ে প্রক্রিয়াকৃত খড় (ইউ.এম.এস) (কেজি) | কাচা ঘাস (কেজি) | সুষম দানাদার খাদ্য (কেজি) |
৫০ | ০.৫০ | ২.০০ | ১.২০ |
৭৫ | ১.০০ | ৩.০০ | ২.০০ |
১০০ | ২.০০ | ৫.০০ | ৩.৫ |
১৫০ | ২.০০ | ৫.০০ | ৩.৫ |
২০০ | ৩.০০ | ৬.০০ | ৪.০০ |
২৫০ | ৩.৫০ | ৭.০০ | ৪.৫০ |
৩০০ | ৪.০০ | ৮.০০ | ৫.০০ |
৩৫০ | ৪.০০ | ৮.০০ | ৫.০০ |
৪০০ | ৪.০০ | ৯.০০ | ৫.০০ |
৪৫০ | ৪.০০ | ১০.০০ | ৫.০০ |
৫০০ | ৪.০০ | ১০.০০ | ৫.০০ |
খাদ্য তালিকার উৎসঃ গরু মোটাতাজাকরণ- মুহাম্মদ ফজলুল হক।
০৩. মোটাতাজাকরণ ঔষধ, ভিটামিন, মিনারেলস এবং চিকিৎসা পদ্ধতি:
ক. কৃমি মুক্তকরণ এবং লিভার সুস্থকরণঃ
ষাঁড় মোটাতাজাকরণের জন্য পশু নির্বাচনের পর প্রথম কাজ হল পশুকে পরজীবিমুক্ত করা। প্রতি তিন/চার মাস পরপর গরুকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া আইভারমেক্টিন ১% প্রয়োগ করে গরুর শরীরের উকুন আঁটালি দূর করতে হবে।
Calcimax 100ml গরুর জন্য বেস্ট কোয়ালিটি ক্যালসিয়াম ইনজেকশন
Cleo cat food 1.2 kg Best cat food ever
PB Ferti 100ml কবুতর ও অন্যান্য পাখির প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
গরু মোটাতাজাকরণ প্যাকেজ- আটটি মেডিসিনের ম্যাজিক কম্বো অফার
খ. ভ্যাক্সিন প্রয়োগঃ
গরু কেনার সময় জেনে নিতে হবে কোন ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা আছে কিনা। আগে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা না থাকলে দশ থেকে পনেরো দিন পরপর এক এক করে এ্যানথ্রাক্স বা তড়কা, ক্ষুরা, বাদলা, গলাফুলা, লাম্পি বা এলএসডি ইত্যাদির রোগের ভ্যাক্সিনগুলা প্রয়োগ করতে হবে। সবগুলা ভ্যাক্সিন প্রয়োগ সম্ভব না হলে কমপক্ষে তিনটি রোগের যেমন এ্যানথ্রাক্স, এফএমডি, এবং এলএসডি ভ্যাক্সিন অবশ্যই করা উচিত।
গ. মোটাতাজাকরণের জন্য মেটাবোলিক ফাংশন ঠিক করাঃ
ষাঁড় মোটাতাজাকরণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মেটাবোলিক ফাংশন ঠিক করা। মেটাবোলিক ফাংশন ঠিক থাকলে খাদ্যের পুষ্টি এবং সম্পূরক পুষ্টি উপাদান পশুর শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হয় ফলশ্রুতিতে মাংস বৃদ্ধি এবং অল্প সময়ে মোটাতাজাকরণ সম্পন্ন হয়। সেক্ষেত্রে নিম্নের যেকোনো একটি ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারেঃ
- এসিআই কোম্পানির ক্যাটোফোর্স । এতে উপস্থিত Torin সরাসরি মাংসকোষ গঠনে ভূমিকা রাখে, Butaphosphan এবং Vitamin B12 মেটাবোলিক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, এছাড়া DL Methionine, এবং Nicotinamide পশুর শরীরের চুল ঝরে যাওয়া রোধ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে মোটাতাজাকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- রেনাটা কম্পানির ক্যাটোফস। এতে উপস্থিত Butaphosphan এবং Vitamin B12 পশুর মেটাবোলিক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
গরু মোটাতাজাকরণ প্যাকেজ- আটটি মেডিসিনের ম্যাজিক কম্বো অফার
ঘ. বিভিন্ন প্রকার নিউট্রিশন ঘাটতিজনিত সমস্যা ও তার সমাধানঃ
- ভিটামিন, মিনারেলস এবং এ্যামাইনো এ্যাসিডঃ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলস এর সংমিশ্রণে বাজারে পাওয়া যায় মেগাভিট ডিবি, রেনাভেট ডিবি, ডিবি বায়ান্ন ইত্যাদি। এগুলা থেকে যেকোনো একটি অনুমোদিত মাত্রায় খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসঃ দুগ্ধবতী গাভীর শরীর থেকে দুধের সাথে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়, ফলে ক্যালসিয়াম ঘাটতিজনিত রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, এক্ষেত্রে ভাল কম্পানির ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।
- প্রোবায়োটিকঃ পাকস্থলির মাইক্রোফ্লোরা বৃদ্ধি করতে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন প্রকার প্রোবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
লিভার টনিকঃ সাধারণত কৃমিনাশক প্রয়োগের পর পাঁচ থেকে সাত দিনের জিংক সিরাপ এবং লিভারটনিকের ডোজ করতে হয়, যাতে লিভার সুস্থ হয় এবং খাদ্যের প্রতি চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি লিভারটনিক রেনালিভ, সুপারলিভ, হেপাভেক্স ২০০, লিভাভেট ইত্যাদি।
Calcimax 100ml গরুর জন্য বেস্ট কোয়ালিটি ক্যালসিয়াম ইনজেকশন
Cleo cat food 1.2 kg Best cat food ever
PB Ferti 100ml কবুতর ও অন্যান্য পাখির প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
গরু মোটাতাজাকরণ প্যাকেজ- আটটি মেডিসিনের ম্যাজিক কম্বো অফার
০৪. সাবধানতা অবলম্বন:
মোটাতাজাকরণের জন্য কোনোভাবেই স্টেরয়েড জাতীয় ক্ষতিকর মেডিসিন প্রয়োগ করা যাবে না। ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও ডেক্সামেথাসন জাতীয় মেডিসিনের যথেচ্ছ প্রয়োগ গরুর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং বিশ্বস্ত কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রয়োজনীয় পরজীবিনাশক, ভ্যাক্সিন, লিভারটনিক, ভিটামিন, মিনারেলস এবং মেটাবোলিক ইনহ্যান্সার ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। গরু সুস্থ থাকলে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে শরীরে শোষণ করতে পারলে গরু এমনিতেই স্বাস্থ্যবান হবে।